ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধপরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কৌশল কী হতে পারে?

সুজিত সজীব, ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত : ২১:৩৫, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য যেকোনো সামরিক সংঘর্ষ কেবল দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এর অভিঘাত গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণের প্রকৃতি এমন যে, একটি পূর্ণমাত্রার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ঢাকা নিশ্চুপ থাকতে পারবে না। ফলে এই ধরনের সংঘাত শুরু হলে বাংলাদেশকে তাৎক্ষণিক, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদে একাধিক কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। 

তারা জানান, প্রথমত, যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশকে অবিলম্বে কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে হবে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের মাধ্যমে শান্তি স্থাপন এবং উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানানো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হয়ে উঠতে পারে। এতে একদিকে যেমন দেশের নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করা যাবে, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহানুভূতিও অর্জন করা সম্ভব হবে।

দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের সময়ে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এ ধরনের সংঘাতে অস্ত্র, মানুষ এবং গুজব—তিনটি জিনিসই সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। ফলে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় কাজ করতে হবে। সীমান্তবর্তী জনগণকে সচেতন করা, জরুরি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সক্ষমতা নিশ্চিত করা জরুরি।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশকে একটি মানবিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে, বিশেষ করে কাশ্মীর বা পাঞ্জাব অঞ্চল থেকে শরণার্থী প্রবাহের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। ১৯৭১ সালের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। এর পাশাপাশি, নিজস্ব জনগণের খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানির সরবরাহ সুনিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

চতুর্থত, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত হবে। যুদ্ধকালীন সময়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটবে, বিশেষ করে ভারতীয় ট্রানজিট বা সীমান্ত বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই বিকল্প রুট ও বন্দর ব্যবহার, অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে জোর, এবং জরুরি পণ্যের স্টক গড়ে তোলার মতো বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সবশেষে, এমন একটি পরিস্থিতিতে ‘আগ্রাসী নিরপেক্ষতা’ বজায় রাখা বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অবস্থান হতে পারে। অর্থাৎ, কোনো পক্ষের সঙ্গে প্রকাশ্য জোটবদ্ধ না হয়ে, জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে নীতিগতভাবে নিরপেক্ষ থাকা এবং নিজের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এই অঞ্চলকে শান্তিপূর্ণ রাখার উদ্যোগেও নেতৃত্ব দিতে পারে বাংলাদেশ।

পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, বাংলাদেশকে দায়িত্বশীল, দূরদর্শী ও দৃঢ় সিদ্ধান্তে চলতে হবে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিক কৌশল, সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের সমন্বয়েই এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এসএস//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি